www.chini24.online

www.chini24.online detailed reporting and presentation of information about current events, issues, or stories.

Subscribe Us

Friday, 10 January 2025

আদিলকে আমি বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এসেছিলাম। সড়কে আন্দোলন করতেছিলাম আমরা, এমন সময় হঠাৎপুলিশ গুলি শুরু করে... বিস্তারিত কমেন্টে...


ছেলের নামে সড়কের নামকরণ চান শহিদ আদিলের মা


নারায়ণগঞ্জ, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): আদিলকে আমি বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এসেছিলাম। সড়কে আন্দোলন করতেছিলাম আমরা, এমন সময় হঠাৎপুলিশ গুলি শুরু করে।

আমরা সবাই পিছনে ফিরতেছিলাম। কিন্তু আদিল নির্ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। ওরে বারবার বলছিলাম তখন, মিছিলের সামনে বড়দের যাইতে দেও। তুমি যাইয়ো না।

ও বলেছিল, ভয়ে সবাই পিছিয়ে গেলে সামনে এগিয়ে যাবে কে? এরমধ্যেই হঠাৎ একটা গুলি এসে ওর বুকে লাগে। ওর লাশটা যখন আমি নিয়ে আসি। তখনো ওর চোখ দুটি খোলা, যেন ওর লড়াই বাকি আছে। আমরা ভেবেছিলাম ও তখনো জীবিত। কিন্তু আদিল ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ মোহাম্মদ আদিলের মৃত্যু পূর্ববর্তী শেষ সময়ের কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন তার চাচাতো ভাই সাজিদ।

শহিদ মোহাম্মদ আদিল গত ১৯ জুলাই দুপুরে ভূইগড় ঢাকা - নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডে আন্দোলনরত অবস্থায় বুকে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ভূইগড় কেন্দ্রীয় কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। মেধাবী শিক্ষার্থী আদিল তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৬ বছর বয়সী এই কিশোর ছিলেন প্রবল উদ্যমী ও সাহসী। জয়ী হয়েছেন একাধিক ম্যাথ অলিম্পিয়াডে। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা হবেন।

 

ছেলের সেনাসদস্য হওয়ার স্বপ্নের কথা জানিয়ে তার মা আয়েশা বেগম (৪৫) বলেন, আমার ছেলেকে একদিন রাতে কোচিং থেকে ফেরার পথে পুলিশ ‘রাতে বাহিরে কি করো’ এই ধরনের প্রশ্ন করে। ছোট্ট ছেলে আমার ভয়হীন হয়ে সাবলীল ভাবে উত্তর দেয়। সেদিন তারাও আমার ছেলের কথায় মুগ্ধ হয়ে বলেছিল, তোমার মতো ছেলেই হবে দেশের ভবিষ্যৎ।

আমার ছেলে চেয়েছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েদেশের জন্য কাজ করবে। আদিলের সেনাবাহিনীতেযোগ দেয়ার স্বপ্ন হারিয়ে গেলেও দেশের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।

তিনি বলেন, ছেলেটা মারা গেছে, অনেক কষ্ট লাগে আমার। কাউকে বুঝাতে পারি না এই কষ্ট। কিন্তু দেশের জন্য অনেক মায়া আছিলো আমার আদিলের। আমি বলতাম, তুমি আন্দোলনে যাইয়ো না আদিল। তুমি ছোট মানুষ। আমারে উল্টো জবাব দিয়ে বলতো, যারা মারা যাইতাছে তারাও তো তোমার মতো কোন মায়ের সন্তান। মেজো ছেলেটারে পারলেও ওরে আমি আটকাইতে পারি নাই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন আয়েশা বেগম।

তিনি আরো বলেন, ‘আমার বড় ছেলে নোমান (২৭) স্কলারশিপ নিয়ে দুবাইয়েপড়াশোনা করছে। মেজো ছেলে বায়েজিদ (২৪) অনার্সে পড়ে। আমার তিনটা ছেলে। তবে আদিল সবচেয়ে বেশি সাহসী ও মেধাবী ছিল। ছেলেটারে মাদ্রাসার আবাসিক হোস্টেলে দিয়েছিলাম এ বছর। হোস্টেল থেকে প্রতিদিন আন্দোলনে যাচ্ছিল। কত যে বলেছি তুমি যাইয়ো না। কে শুনে কার কথা, প্রতিদিন যাইতো। পরে বলেছিলাম বাবা আমার শরীরটা ভালো না, বাসায় আয়। রাস্তায় গাড়ি না পেয়ে সেই যাত্রাবাড়ি থেকে হেঁটে বাসায় আসছে।

পরদিন আমি ওর পছন্দের রান্না করছি। ছেলেটা সকালে বলছে, কতদিন পর আসছি, মজার কিছু রান্না করো। দুপুরে আমরা মা ছেলেরা সবাই বসে ভাত খেতে বসেছিলাম।

এমন সময় ওর ভাই সাজিদ আন্দোলনে যাবে কিনা জিজ্ঞেস করে ডাক দেয়। ভাতের প্লেট রেখেই বের হয়ে যায় আদিল । শেষ বারের মতো খেতেও পারেনি ছেলেটা আমার।

অনেক জোরাজুরি করেও ওরে ঘরে আটকায় রাখতে পারি নাই। ছেলে আমার সেই যে গেল তো গেল, ফিরল লাশ হয়ে।’

আদিলের বাবা আবুল কালাম (৫৫) দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আজকে তো সবাই আদিলকে নিয়ে গর্ব করে। কিন্তু ৫ আগস্টের আগে অনেকেই তামাশাভরা কন্ঠে বলছে, ‘পাকনামো করে কেন গেল সামনে, না হলে মরত না’।

ছেলের মৃত্যুর পর আদিলের বাবা-মা ফতুল্লার দেলপাড়ার নিজ বাড়ি ছেড়ে উঠেছেন ভাড়া বাড়িতে। ছেলের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে তাদের পুরো বাড়ি। ছেলের মৃত্যুর পর আদিলের মা- বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

আদিলের ভাই বায়েজিদ বলেন, বাবা মাকে সুস্থ রাখতেই আমরা ভাড়াবাড়িতে এসে উঠেছি। মা ওই বাসায় থাকলে পাগল হয়ে যেত। বাবার আগে হৃদরোগ জনিত সমস্যা ছিল না।

আদিলের মৃত্যুর পরে ওনার হার্ট অ্যাটাক হয়।

আদিলের মা নিজের ইচ্ছা পোষণ করে বলেন, ছেলের মৃত্যুর পর আমরা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফান্ড থেকে ৫ লক্ষ টাকা ও জামায়াতে ইসলামী থেকে ২ লক্ষ টাকার সহায়তা পেয়েছি।

কিন্তু আমার ছেলেটা দেশের জন্য প্রাণ দিলো, আমি চাই ওর একটা স্মৃতি থাকুক। সবাই ওরে মনে রাখুক। আমাদের বাড়ির সামনের সড়কটি ওর নামে হোক এটাই আমার শেষ চাওয়া।


 

No comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.

Search This Blog

About Us

About Us
Lorem Ipsum is simply dummy text of the printing and typesetting industry. Lorem Ipsum has been the industry's.

Editors Choice

3/recent/post-list