
ব্রেস্ট ক্যানসার নারীদের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং বাংলাদেশে প্রায় ৬৯ শতাংশ নারীর মৃত্যুর জন্য দায়ী। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। ব্রেস্ট ক্যানসার শনাক্ত করার সঠিক পদ্ধতি—
স্ব-পরীক্ষা (Self-Examination)
নিয়মিত নিজের স্তন পরীক্ষা করা। ব্রেস্টে অথবা বগলে অস্বাভাবিক কোনো চাকা, ত্বকের পরিবর্তন, বা নিপল থেকে রক্ত বা তরল কিছু নির্গত হলে সতর্ক হতে হবে।
ডাক্তারি পরীক্ষা
স্তন পরীক্ষা করার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানো উচিত। চিকিৎসক ফিজিক্যাল পরীক্ষা করে যেকোনো অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করবেন।
ম্যামোগ্রাম (Mammogram)
এটি এক্স-রে প্রযুক্তির মাধ্যমে স্তনে কোনো চাকা বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন শনাক্ত করার অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি।
বিশেষ করে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের জন্য প্রয়োজনীয়।
আল্ট্রাসাউন্ড
স্তনে থাকা চাকা তরলভর্তি না শক্ত, তা নির্ধারণে সহায়ক।
কোর বায়োপসি (Core Biopsy)
চাকা থেকে টিস্যু নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা হয়। এটি ক্যানসার নিশ্চিত করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
এমআরআই (MRI)
উচ্চমাত্রার ইমেজিং টেস্ট, যা স্তনের বিভিন্ন পরিবর্তন ও ক্যানসার শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
রক্ত পরীক্ষা
কিছু ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসারের মার্কার (CA 15-3) নির্ণয় করা হয়।
জেনেটিক টেস্ট (Genetic Testing)
যদি পরিবারের ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তবে BRCA1 বা BRCA2 জেনেটিক মিউটেশন চেক করা যেতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
নিয়মিত পরীক্ষা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ ও শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ব্রেস্ট ক্যানসারের চিকিৎসা রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে। এটি ক্যানসারের ধরন, স্টেজ, টিউমারের আকার, রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং রোগীর নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সাধারণত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হলো—
সার্জারি
>Lumpectomy টিউমার এবং আশপাশের কিছু টিস্যু অপসারণ করা হয়, কিন্তু স্তনের বাকি অংশ রাখা হয়।
>Mastectomy – Quadrentectomy ব্রেস্টের সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ।
> Axillary dissection and Lymph node removal
বগলে টিউমারের কাছাকাছি লিম্ফ নোড অপসারণ করে ক্যানসার ছড়িয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়।
রেডিয়েশন থেরাপি
উচ্চশক্তির রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হয়, বা বড় টিউমার অপারেশনের আগে ছোট করা হয়। এটি সাধারণত সার্জারির পরে বাকি থাকা ক্যানসার কোষ দূর করতে ব্যবহার করা হয়।
কেমোথেরাপি
ওষুধের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা বা তাদের বৃদ্ধি বন্ধ করা হয়। এটি সার্জারির আগে (Neoadjuvant) বা পরে (Adjuvant) প্রয়োগ করা হতে পারে।
হরমোন থেরাপি
যদি ক্যানসার হরমোন-রিসেপ্টর পজিটিভ হয়, তাহলে Tamoxifen বা Aromatase inhibitors-এর মতো ওষুধ দিয়ে হরমোনের প্রভাব রোধ করা হয়।
টার্গেটেড থেরাপি
বিশেষ প্রোটিন বা gene-কে টারগেট করে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হয়। উদাহরণ হলো, HER2-পজিটিভ ক্যানসারের জন্য Trastuzumab।
ইমিউনোথেরাপি
রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে boost করে ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে active করানো হয়। এটি সাধারণত ট্রিপল-নেগেটিভ ক্যানসারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসা প্রতিটি রোগীর জন্য আলাদাভাবে নির্ধারিত হয়। নিয়মিত ফলো-আপ এবং পর্যবেক্ষণ রোগটি নিয়ন্ত্রণ ও পুনরায় হওয়া ঠেকাতে সাহায্য করে।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, সার্জারি বিভাগ
সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
No comments:
Post a Comment